বিভিন্ন বর্ণনায় কাবাডি খেলার সুদীর্ঘ ইতিহাসের ইঙ্গিত পাওয়া যায় বটে, এ খেলার উৎপত্তি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা অবশ্য নেই। কাবাডির উৎপত্তি প্রাক-ঐতিহাসিক যুগকে ইঙ্গিত করছে। ধারনা করা হয়, বিপরীত দিক থেকে সংঘবদ্ধ দলের আক্রমণ প্রতিহত করতে কোন একক ব্যক্তির প্রতিরোধের প্রচেষ্টা থেকে উদ্ভাবিত হয়েছে এ খেলা। কাবাডির উৎপত্তি ইঙ্গিত করছে ‘মহাভারত’। বর্ণিত অভিমন্যু কর্তৃক কৌরব সৈন্যদের চক্রব্যূহ ভেদ করার ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনা থেকে ধারণা নিয়ে এ খেলার সৃষ্টি বলেও মনে করা হয়। বৌদ্ধ সাহিত্যে গৌতম বুদ্ধের বিনোদনের জন্য কাবাডি খেলার কথা বলা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে রাজপুত্ররা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে নারীদের হৃদয় জয় করতে কাবাডি খেলতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় জানা যায়। উৎপত্তির সুনির্দিষ্ট দালিলিক প্রমাণ না থাকলেও কাবাডি খেলাটি কয়েক হাজার বছরের পুরনো—এটা বলা যায়।
বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে একেক নামে পরিচিত ছিল এ খেলা, ভিন্নতা ছিল খেলার ধরনেও। অখণ্ড ভারতে কাবাডি জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল একসময়কার দ্বিভাষিক বোম্বাই রাজ্যের অংশ; যা হালের মহারাষ্ট্র। ১৯১৮ সালে কাবাডির আইন-কানুন প্রণীত হয় বলে বিভিন্ন বর্ণনায় জানা যায়। যা মুদ্রিত হয় ১৯২৩ সালে। মুদ্রিত আইন অনুসরণ করে প্রথম কাবাডি খেলা অনুষ্ঠিত হয় বারোদায়। ওটা ছিল সর্বভারতীয় এক কাবাডি প্রতিযোগিতা।
১৯৩৬ সালে বার্লিন অলিম্পিকে কাবাডি প্রদর্শনী হয়। যার মাধ্যমে খেলাটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫০ সালে ভারতীয় কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। তারপর থেকে বিভিন্ন সময় ক্রমান্বয়ে খেলাটির আধুনিক আইন-কানুন প্রণীত হয়। দেশভাগের পর পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে খেলাটির চর্চা বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়।
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ভারতের বিপক্ষে, ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশ-ভারত ৫ ম্যাচের কাবাডি টেস্ট আয়োজিত হয়। ১৯৭৮ সালে এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। খেলাটির এশিয়ান সংস্থা গঠনের দুই বছর পর, ১৯৮০ সালে প্রথম এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়। কাবাডিকে এশিয়া অঞ্চলে জনপ্রিয় করে তুলতে ১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়ান গেমসে খেলাটির প্রদর্শনী হয়। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমসে নিয়মিত ডিসিপ্লিন হিসেবে কাবাডি অন্তর্ভুক্ত হয়। যার মাধ্যমে এ খেলা বৈশ্বিক স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯০ সালের এশিয়ান গেমসের নিয়মিত ডিসিপ্লিন হিসেবে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে কাবাডি বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে আরও বিস্তৃত হয়। বিশ্বকাপ কাবাডি, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান বিচ কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ, ইনডোর কাবাডির মত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে খেলাটি।